নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আসন্ন মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের টানা দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আরিফ মাসুদ বাবু।
সোমবার সকালে উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তাস্থ একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আরিফ মাসুদ বাবু নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বেচ্ছায় উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। বর্তমানে আমার স্বাস্থ্যগত কারনে দলীয় পদ থেকে আমি পদত্যাগ করলাম। তবে আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে সারাজীবন আওয়ামী রাজনীতির পতাকা তলে থেকে কাজ করবো।
সাংবাদিক সম্মেলনে চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা, আসসালামুআলাইকুম, আমার ডাকে আপনারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন, এজন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার বক্তব্য আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করে আমাকে বাধিত করবেন। আমি আমার এবং আমার পরিবারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে আমার মূল বক্তব্য টুকু প্রকাশ করব। যদিও সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা আমার পরিবার সম্পর্কে সবাই অবগত আছেন।
তার পরও একটু বর্ননা করতে চাই আমি, মোঃ আরিফ মাসুদ বাবু, আমার পিতা সোনারগাঁও থানা আওয়ামীলীগ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ১৯৭০ এর নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত (এম.সি.এ) বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম এড. সাজেদ আলী মিয়া। আমার ভাই নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ এর সাবেক সাধারন সম্পাদক, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাবেক সভাপতি, ১৯৭৩ সনে মহান জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ট এম.পি এবং ১৯৮৬ স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের দুঃশাস্বনের আমলে ও বিপুল ভোটে নির্বাচিত এম.পি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোবারক হোসেন।
পরবর্তীতে ১৯৮৯ সনে সোনারগাঁও আওয়ামীলীগ এর দুঃসময়ে দলের হাল ধরেন। সোনারগাঁও আওয়ামীলীগ এর সভাপতি হন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাসনাত। ২০০১ সনে বি.এন.পি জামাত জোট সরকারের সময় মামলা হামলায় সোনারগাঁও আওয়ামীলীগ এর নেতা কর্মিরা যখন জোট সরকারের নির্যাতনের স্টীম রোলারের চাকায় পীষ্ট হয়ে দিশে হারা এরই মধ্যে হাসনাত সাহেব অসুস্থ হয়ে পরেন ঠিক সেই কঠিন সময়ের মধ্যে নিজের আদরের সন্তান কায়সার হাসনাতকে আওয়ামীলীগ নেতা কর্মিদের পাশে দারানোর জন্য নির্দেশ দিলেন।
তার পরের ইতিহাস আপনাদের সবার জানা। কায়সার হাসনাত মাঠে নেমে আওয়ামীলীগ এর নেতা কর্মিদের ঐক্যবদ্ধ্য করে সোনারগাঁও এ দুর্বার আন্দলন গরে তুলেন এবং আমাদের মাতৃতুল্য নেত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে দৃষ্টি আকর্ষন করে সারা বাংলাদেশে আন্দোলনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সেই সমেয় আন্দোলন করতে যেয়ে পুলিশির নির্যাতনের স্বীকার হয়ে গ্রেফতার হন কায়সার হাসনাত আমার মাতৃতুল্য নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তৎকালীন আওয়ামীলীগ এর আইন বিষয়ক সম্পাদক মরহুম এড. আব্দুল মতিন খসরু সাহেব পর পর তিন দিন নারায়ণগঞ্জে এসে কায়সার হাসনাত কে জামিনে মুক্তি করান পরবীতে যার পুরুস্কার হিসাবে আমাদের প্রানের নেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে কায়সার হাসনাতের হাতে নৌকা তুলে দেন। ফলশ্রুতিতে সোনারগাঁওয়ের ৩ বারের এম.পি এবং মন্ত্রী বি.এন.পির রেজাউল করিম সাহেবকে ৮৫০০০ ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন এবং সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ২০১৪ তে এসে, জাতীয় স্বার্থে জোটের কারনে কায়সায় হাসনাতকে মনোনয়ন না দিয়ে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলেন। আমরাও নেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে জোটকে স্বাগত জানালাম। পরবর্তীতে নেত্রী আমাদের মূল্যায়ন করে আমার আরেক ভাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোশারফ হোসেন কে উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতিক দেন, এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সফল ভাবে দায়িত্ব পালন করা কালিন সময়ে গত জুলাই ২০২১ সালে ইন্তেকাল করেন। পরবর্তি উপ নির্বাচনে আমরা ভেবে ছিলাম আমাদের পরিবারেই নৌকা প্রতিক দিবেন, কিন্তু সে সময় নৌকা আমাদের না দিয়ে একজন সিনিয়র নেতাকে দিলেন, আমরা মেনে নিয়ে সতস্ফুর্ত ভাবে ওনাকে সমর্থন দিয়ে চেয়ারম্যান বানিয়ে দিলাম। সর্ব শেষ মোগরাপাড়া ইউনিয়ন যেটা আমাদের ৭০ বৎসরের ইতিহাস।
মোগরাপাড়া ইউনিয়ণ হলো সোনারগাঁও রাজনীতির রাজধানী, আওয়ামী রাজনীতির পূন্যভূমি যার ধারক বাহক হলো আমাদের এই পরিবার। অনেক প্রতিকুলতার মাঝেও যেমন পাকিস্তানী আমল, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার জামাত বি.এন.পি জোটের অত্যাচার নির্যাতনের মধ্যেও আমাদের পরিবার থেকে চেয়ারম্যান পদবি কেউ কোন দিন ছিনিয়ে নিতে পারে নাই। তারই ধারা বাহিকতায় বিগত ১০ বৎসর যাবৎ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগনের সেবা করে আসছিলাম। জনগনের সেবা করতে এসে আমি আমার বাবার নীতী এবং আদর্শ কে অনুকরন এবং অনুসরন করতে চেষ্টা করেছি।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা আপনারা নিশ্চই আমার বাবার সম্পর্কে অবগত আছেন। আমার বাবা সারা জীবন রাজনীতি করেছেন মানুষের জন্য, নিজের এবং পরিবারের জন্য কোন কিছু করেন নাই। ওনার একটাই লক্ষ ছিল সোনারগাঁওয়ের দরিদ্র জনগুষ্টিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলে আদর্শ সোনারগাঁও বানানো। সেই সপ্ন নিয়েই গড়ে তোলে আজকের মোগরাপাড়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এবং একমাত্র ডিগ্রী কলেজ তথা বর্তমানে সোনারগাঁও সরকারী কলেজ।
এই প্রতিষ্ঠান দুটি ধার করানোর জন্যই জীবনের সমস্ত অর্জন ব্যায় করে গেছেন। সে আলোকেই আমি চেষ্টা করছি এই ১১ বৎসর মোগরাপাড়া ইউনিয়ন এর গরিব দুঃখি মানুষের পাশে দাড়াতে, কখনো অনৈতিক কোন সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা ও করিনি, মানুষ যাতে আমার দ্বারা সামান্য কষ্ট না পায় সেই চেষ্টাই আমি করেছি। অনৈতিক ভাবে টাকা কামানোর চিন্তাও করিনি কোন দিন।
গেল দুই বছর এই ভয়বহ করোনা মাহামারীতে আমি এবং আমার পরিবার নেত্রীর নির্দেশে দিন রাত পরিশ্রম করে জীবনের মায় ত্যাগ করে সাধরন মানুষের পাশে দাড়াতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি এত সচ্ছ থেকে রাজনীতি করে বিনিময়ে আজকে নৌকা থেকে বঞ্চিত হলাম। যে পরিবারে ৩ প্রজন্ম আওয়ামী লীগ মনোনীত এম.পি যা সারা বাংলাদেশে হাতে গুনলে এরকম ১০ টি পরিবার ও খুজে পাওয়া যাবে না আজ সেই পরিবারটিকে সামান্য একটি ইউনিয়ণ পরিষদে নৌকা থেকে বঞ্চিত হতে হল, এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে? বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে পরটির উত্থান, বঙ্গবন্ধুর গড়া আওয়ামী লীগ এর স্বর্ণ যুগে সেই পরিবারটের এমন করুন পরিনতি, এমন অপমৃত্যু আমার কাছে মনে হয় আমিই ব্যায়।
আমি মনে হয় আমার দলকে কিছুই দিতে পারিনাই, আওয়ামী লীগ এর জন্য কিছুই করতে পারি নাই। আমার জন্য আমার পরিবারে ৭০ বৎসরের সাফল্য অর্জন ম্লান হতে চলেছে। তাই আমার নেত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে সোনারগাঁয়ের সকল নেতা কমির কাছে ক্ষমা চেয়ে সর্বপরি আমার পরিবারের পূর্বপুরুষ এবং বর্তমান প্রজন্মের সকল সদস্যের কাছে ক্ষমা চেয়ে সকল ব্যার্থতার দায় তার নিয়ে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ এর আহ্ববায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারন আমি মনে করি আমার মতো অযোগ্য লোক দায়িত্বে থাকার কোন প্রয়োজন নাই। এই পদে অন্য লোক নিয়োগ দিলে দল এর কর্মীরা উপকৃত হবে। তবে আমি আমার পদ থেকে পদত্যাগ করলেও সারা জীবন যতজীবন বাঁচি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক এবং জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার একজন নগন্য কর্মী হয়ে দলের কাজ করে যাবো। আপনারা সবাই আমার জন্য দেয়া করবেন জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু।